জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোনো রাজনৈতিক দল অবৈধ অস্ত্র, ধর্মীয় উস্কানি, নাশকতার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
আজ দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি বিষয়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ, ধর্মীয় উস্কানি ও নাশকতার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের বিশৃঙ্খলা কেউ যাতে সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব ধরনের নাশকতা বন্ধে সকল বাহিনীর সাথে সমন্বয় করবে।’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, প্রত্যেক দল তাদের কর্মসূচি পালন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনজীবন অচল করে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হলে, আইন-শৃঙ্খলা অবনতি করা হলে সেগুলো প্রতিহত করা হবে। নির্বাচনের সময় অস্ত্র আসতে পারে এমন খবর প্রকাশ হয়েছে।
যাতে অস্ত্র আসতে না পারে সেজন্য বিজিবিসহ সকল বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া হুন্ডি তৎপরতা বেড়েছে। অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। হুন্ডি এবং জুয়া বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে মাদক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। এটা দুঃখজনক, সমাজের একটি অংশ মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এজন্য কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে, অভিভাবকদেরকে আহŸান জানানো হচ্ছে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য, সচেতন হওয়ার জন্য। মাদক যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সরকারি কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট নিয়ে নতুন নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে ডোপ টেস্ট করা হয়, তাতে মাদক গ্রহণকারীদের চিহ্নিত করা সহজ নয়। কারণ ৭২ ঘণ্টা পরে ডোপ টেস্ট করা হলে কেউ মাদক গ্রহণ করেছে কি না, তা জানা যায় না। এজন্য নতুন নীতিমালা করা হবে, যার আওতায় যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে যেকোনো সময় সন্দেহ হলেই যাতে টেস্ট করা যায়। টেস্টের নামও নতুন করে রাখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার কিছু এনজিও আছে, রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশ ছেড়ে মিয়ানমার না যায়, সেজন্য এনজিওগুলোর এক ধরনের তৎপরতার খবর এসেছে। বিভিন্ন গুজব রটানো হচ্ছে। এসব এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাইবার ক্রাইম হচ্ছে। বন্ধ করা যাচ্ছে না। অনলাইনে গুজব রটানো হচ্ছে। রাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত সংস্থাকে পাল্টা জবাব দেওয়া, গুজবের সত্য ঘটনা তুলে ধরতে বলা হয়েছে।’
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দ্রব্য মূল্য নিয়ে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে কিন্তু কার্যকর হয়নি এমন নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে। প্রান্তিক কৃষক দাম পাচ্ছে না। কিন্তু বাজারে মূল্য অনেক বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। এজন্য প্রচলিত আইনে মজুদদারদের বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় সারাদেশে পূজা মন্ডপসহ পূজাকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত কর্মসূচি থাকবে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সকল পূজা মন্ডপে সিসিটিভি স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছে। সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাভাবিক পরিবেশে নাগরিকেরা যাতে মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয় রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা যেতে পারে। প্রতিপক্ষের কর্মসূচি প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক দলগুলো কি কৌশল নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। এর সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব সকল নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেটা করা হবে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।