ইসরায়েল আমাদের সবাইকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আবু আহমেদ। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকায় নিজ বাড়ির বাইরে বসে ছিলেন অসহায় এই বৃদ্ধ।
স্থানীয় সময় রবিবার রাতভর এ এলাকায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার বাসিন্দারা বলছেন, ওই রাতে সবচেয়ে নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন তারা। খবর আলজাজিরার।
ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় গাজার বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে এক হাজারের বেশি নারী-পুরুষ-শিশু চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে মিনিটে মিনিটে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে আহত ফিলিস্তিনিদের। গাজার হাসপাতালগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। বিদ্যুৎ, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চরম সংকট চলছে সেখানে। ইসরায়েলের মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণে আহত মানুষের সংখ্যাটা এত বেশি যে তাদের সবাইকে হাসপাতালে ঠাঁই দেওয়ার জায়গাটুকু নেই। মর্গগুলো লাশে ভরা।
এরই মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর গাজায় বোমায় বিধ্বস্ত চারটি হাসপাতাল আর চিকিৎসা দেয়ার অবস্থাতে নেই। অপর দিকে গাজার ২১টি হাসপাতাল ইসরায়েল বাহিনী খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটি বলছে, গত ১০ দিনে গাজার ১১০টির বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে দেখা যায়, একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে ঠাসাঠাসি করে আহত ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আসা হচ্ছে। বেশির ভাগই শিশু। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে তাদের মধ্যে কাকে চিকিৎসা দেবেন, আর কাকে ফিরিয়ে দেবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে দেখা যায় চিকিৎসাকর্মীদের।
রবিবার রাতের মতো সোমবারও দিনভর গাজাজুড়ে চলেছে ইসরায়েলের বিমান হামলা। এতে অনেক বেসামরিক ভবন মাটিতে মিশে গেছে। বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যা।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে টানা ১০ দিন চলা ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকায় ২ হাজার ৮০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের ৬৪ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে ৫৭ ফিলিস্তিনি।
গাজায় স্থল হামলা চালাতে সোমবারও উপত্যকাটির সীমান্তে ব্যাপক রণপ্রস্তুতি নেয় ইসরায়েল। এই প্রস্তুতির মুখে শুক্রবার উত্তর গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বলে তারা। ইসরায়েল জানায়, ওই নির্দেশের পর উত্তর গাজার ১১ লাখ বাসিন্দার মধ্যে আনুমানিক ৫ লাখ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়েছে। আর জাতিসংঘ বলছে, গাজায় তাদের পরিচালিত স্কুল ও ভবনগুলোয় ৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরদিনই গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে ইসরায়েল। বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহ। এরপর থেকে ভীষণ রকমের মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন গাজাবাসী। উপত্যকাটির মানুষ ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের’ মুখে রয়েছেন বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।