দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। জানা গেছে, গত শুক্রবার দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে বিভিন্নজনের ‘কটাক্ষ’ করে বক্তব্য এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এ সময় মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ধাওয়ার সময় ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। আগামী ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের সনাতন সমপ্রদায়ের মানুষ দুর্গাপূজা উদযাপন করবে। বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ দেশে সামপ্রদায়িক সহিংসতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও পূজার সময় হামলা-ভাঙচুরের মতো ঘটনা নতুন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো এসব ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেয়া হলেও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ন্যক্কারজনক এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দেশে সামপ্রদায়িক হামলার ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে। ঘটনাগুলো দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে না পারা উদ্বেগজনক। ২০২১ সালে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সময় যেভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হামলার শিকার ভুক্তভোগীরা পুনরায় হামলার ভয়ে এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে মামলা করতে ভয় পান। হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সমপ্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। সত্যি সত্যি ধর্মের অবমাননা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না অথবা হলেও প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে টার্গেট হয়ে পড়ছে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। এ ধরনের সামপ্রদায়িক বিষবাষ্পকে প্রতিহত না করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শৈথিল্য এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার দায় রয়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। গত বছর দুর্গাপূজার সময় দেশে ব্যাপক সামপ্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আসন্ন পূজায় এবার প্রতিটি পূজামন্ডপ ও আশপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতার বিকল্প নেই। ঐক্য পরিষদের আহ্বানে ইতোমধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালে ২০-২৪ অক্টোবর কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২৩ অক্টোবর নবমী পূজার দিন শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকেছে। আওয়ামী লীগকে ওই দিনের সমাবেশ থেকে সরে আসার আহ্বান করেছে ঐক্য পরিষদ। বিষয়টি নিশ্চয় দল বিবেচনায় নেবে। পূজা যেন শঙ্কাহীন হয়, সে বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনকে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামপ্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।