মাদক এখন অনিয়ন্ত্রিত। কোনো পরিকল্পনা কাজে আসছে না। সব ব্যর্থ। এটি সহজলভ্যও বটে। হাত বাড়ালে পাওয়া যায়। সর্বশেষ মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ বা সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার কথা বলেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এর অগ্রগতি আমাদের জানা নেই। বলা হয়েছে ধরপাকড় নয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা, কাউন্সিলিং ও সচেতনতা বাড়িয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তালিকা করা হয়েছিল ১ লাখ মাদকাসক্তের। যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। উদ্যোগটি সময়োপযোগী। সামাজিক অবক্ষয় রোধে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি। মাদকের ভয়াবহতা যে কতটা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। কোনোভাবেই এটা হ্রাস হচ্ছে না। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় দিনই একাধিক চালান উদ্ধার ও বহনকারী গ্রেপ্তার হলেও যেন অপ্রতিরোধ্য মাদক কারবারিরা! গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, সীমান্তসংলগ্ন ৩২ জেলা দিয়ে দেশে ঢুকছে ২৪ ধরনের ভয়ংকর সব মাদক। মদ, সিসা, গাঁজা, এলএসডি, ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেড্রিন, বুপ্রেনরফিন, লাইসার্জিক এসিড ডাই-ইথালামাইড (এলএসডি), ডাইমিথাইলট্রিপ্টামাইন (ডিএমটি), গাঁজার কেক, ম্যাজিক মাশরুমসহ বিভিন্ন নতুন মাদকে সয়লাব দেশ। সূত্র বলছে, ইয়াবা ও আইসের জন্য মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও টেকনাফ পুরনো রুট হলেও রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং যশোর সীমান্তও মাদক কারবারিদের চেনাজানা। মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে ৭ আন্তর্জাতিক রুট হয়ে কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে ক্রিস্টাল মেথ। কমপক্ষে ১১টি অভ্যন্তরীণ রুট হয়ে ক্রিস্টাল মেথের চালান দেশে আসছে। ভারত থেকে ফেনসিডিলের চালান পাচার হয়ে আসছে। যে পরিমাণ ধরা পড়ছে তার তিনগুণেরও বেশি মাদক সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। আমরণ নেশা ইয়াবা দেশের তরুণ সমাজকে এখন সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে। মুড়ি-মুড়কির মতো সর্বত্র ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা চলছে। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। আইন প্রণয়নের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ দিকটিতে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, সামপ্রতিক বছরগুলোয় মাদক হিসেবে ইয়াবার আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। দেশের বিরাটসংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত ইয়াবার নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ইয়াবার থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এ দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।