যশোরের চৌগাছায় ভারতীয় নাগরিক মাদক ব্যবসায়ীর গুলিতে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে খোকন (৪৭) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী মারাত্মক আহত হয়েছেন। তিনি মুমুর্ষ অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ১০৫নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী (পকেট) দৌলতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীর আলম খোকন গ্রামের ইছাহক আলীর ছেলে। আহতের ভাগ্নে রাজু আহামেদ সাংবাদিকদের জানান, জাহাঙ্গীর আলম এবং তার আপন খালাতো ভাই সানোয়ার হোসেন (৫৫) ওরফে ফেন্সি সানোয়ারের (ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাগদা থানার মামা-ভাগ্নে গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ও গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা) সাথে আগে থেকেই বিরোধ ছিলো।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় ৪৫ মিনিটের দিকে জাহাঙ্গীর আলম নিজের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় সানোয়ার এবং দৌলতপুর গ্রামের খোরশেদের ছেলে আবুল কাশেম (৪৪) ঘরের জানালা দিয়ে ৬ রাউন্ড গুলি করে। গুলিতে জাহাঙ্গীর আলমের বাম হাতের দুটি আঙ্গুল ভেঙ্গে যায় এবং একটি গুলি তার বুক ভেদ করে ছিদ্র হয়ে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। হামলাকারীদের পরিচয় জাহাঙ্গীর ওরফে খোকন নিজে নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন ভাগ্নে রাজু আহমেদ এবং প্রতিবেশি মিলন হোসেন। ভাগ্নে রাজু আরও জানান, ‘ঘটনার পরপরই দ্রুত জাহাঙ্গীরকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
সেখান থেকে চিকিৎসক তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিলে আমরা তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি।’ আহতের ভাই মোঃ বাবু বলেন, রাতে ভাইয়ের চিৎকারে দ্রুত তার ঘরে এসে দেখি ভাইয়ের হাতে ও পেটে গুলি লেগেছে। আরও তিনটি গুলি ঘরের মধ্যে দেয়ালে লেগেছে। মেঝেতে গুলির খোসাও পড়ে আছে। এবিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা সুখপুকুরিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোতা মিয়া বলেন, মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে খোকনের উপর এই হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ ফোর্স সহ আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি।
জাহাঙ্গীরের পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা এবং চৌগাছা থানা সূত্রে জানাগেছে, সানোয়ার ও ফেন্সি সানোয়ার এবং জাহাঙ্গীর আলম আপন খালাতো ভাই। বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্তবর্তী পাশাপাশি (আন্তর্জাতিক সীমারেখা নেই বললেই চলে) গ্রাম দৌলতপুরে তাদের দুই পরিবারের বসবাস। দুইজনই মাদক বড় মাপের মাদক কারবারি ও মানবপাচারকারী হিসেবে দেশের বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি করে মামলা রয়েছে। সানোয়ারের পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামে। তবে তার পিতারা দীর্ঘদিন আগেই ভারতে চলে যান।
সেখানেই সানোয়ারের জন্ম। সানোয়র এ অঞ্চলের মাদক কারবারীদের গডফাদার হিসেবেও পরিচিত। তার চৌগাছা ও মহেশপুর উপজেলার মধ্যবর্তী পুড়াপাড়া বাজারে একটি আলীশান বাড়িও রয়েছে। চৌগাছার স্বরুপদাহ গ্রামে তার শ^শুর বাড়ি। সেই সূত্রে এই অঞ্চলের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীর আলম সানোয়ারের একটি ফেন্সিডিলের বড় চালান বিজিবির কাছে ধরিয়ে দেয়। সেটা নিয়ে এবং মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মূলত তাদের দু’ভাইয়ের দ্বন্দ্ব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।