ঝিনাইদহ-খুলনা রোডমার্চ
আমরা এখন আর খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। স্বদেশকে মুক্ত করব, স্বদেশ মুক্ত হলে তাকে আমরা মুক্ত করব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমীয় জেলা ঝিনাইদহ থেকে খুলনা অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চ যশোর অংশের পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যেকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। যশোর শহরের মুড়লী মোড়ে অনুষ্ঠিত এই পথসভায় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন আর খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। তাকে আমরা মুক্ত করব। দেশ বাঁচাতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতেই হবে। স্বদেশ মুক্ত করতে, দেশের সম্পদ মুক্ত করতে ও জনগণের ভোটাধিকার মুক্ত করতেই আমাদের আন্দোলন। এ সরকারের নেতারা দেশ থেকে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশের ভার শূন্য। সরকার দুই মাস পরে কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারবে না। টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার দিন শেষ। গভর্নর বলেছে আর ধার দেবে না। মির্জা আব্বাস বলেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে।
বিএনপির আন্দোলন হবে ডু আর ডাই বলে মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জনগণের উপর আওয়ামী লীগের অন্যায় দুশাসন ওষুধ এখন আর হোমিওপ্যাথিতে কাজ হবে না। ওদের লাগবে সার্জারি। সার্জারি ছাড়া উপায় নাই। ঠিক বিএনপির আন্দোলনও হবে ডু আর ডাই। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে চাই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। জনগণ যদি মুক্ত হয়; খালেদা জিয়াও মুক্ত হবে। গণতন্ত্র মুক্ত না হলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধ করে এসেছে; কারোও ভাষণে আসেনি বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলো; সেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র শেষ করেছে শেখ হাসিনা। সেই গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত আমরা মার খাচ্ছি। আর মার খাওয়ার সময় নেই। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত দিতে হবে। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে; মানুষকে আঘাত করলে কেমন ব্যাথা লাগে! এই আঘাত গনতান্ত্রিক; এটা অন্যায় নয়! কেননা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমার মতো মানুষকেও আজকাল মাথায় বাড়ি দিয়েছে। তার পরেও পথ ছেড়ে চলে গেছি! না ….। পথেই যেহেতু নেমেছি; পথেই দাবি আদায় করেই বাড়ি ফিরবো। সুতরাং যুদ্ধের মতো প্রস্তুত হন। ওদের হাতে আছে লাঠি; আমাদের মা বোনদের হাতে ঝাড়–। ওদের ঝাড়– মেরে বিদায় করতে হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের শত্রু ; জনগণের শত্রু। নারী, মুদ্রা পাচারকারী গুম খুনহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। তাই স্লোগান হবে হঠাও হাসিনা; বাাঁচাও দেশ।
আরেক কয়েকদিন পর খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সিংহাসনে বসবেন মন্তব্য করে আরেক বিশেষ অতিথি দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আপনাদের সময় শেষ। জনগণ রাজপথে নেমেছে। পালানোর সময় পাবেন না। ভালোই ভালোই মুক্তি দেন। তা না হলে জেলখানা ভেঙ্গে বাংলার মানুষ বাংলার নেত্রীকে মুক্ত করবে। এটাই প্রথম; এটাই শেষ দাবি। পদত্যাগ (শেখ হাসিনা) আপনাকে করতে হবেই। আরেক কয়েকদিন পরেই বিএনপি সময়। দেশ কিভাবে চলবে ঠিক করবে বিএনপি। আর কয়েকদিন পরেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সিংহাসনে বসবেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান আসবেন বীরের বেশে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিমানবন্দরে শুভেচ্ছা জানাবে। যশোর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।
এর আগে সকালে ঝিনাইদহ থেকে শুরু হয় এই রোডমার্চ। এরপর মাগুরা-যশোর সড়কের শেখপাড়া মসজিদের সামনে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহাসড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পথসভায় মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতারা জানান, মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়ায় আরও একটি পথসভা শেষে যশোরের বাঘারপাড়ার পুলেরহাট বাজারে পথসভা করে নেতৃবৃন্দ। এর পর যশোর শহরের মুড়লি ও অভয়নগরে পথসভা করে খুলনা অভিমুখী যায় রোডমার্চটি। কয়েক হাজার পিক আপ, ট্রাক ও বাস ছাড়াও শতাধিক মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে ১০-১৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে এই রোডমার্চটি খুলনা খুলনার শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেখানে জনসভায় নেতারা ভাষণ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রোডমার্চ শেষ করবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোডমার্চে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর ঢল নামে। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সেখানে জড়ো হন তারা। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যানার ও স্লোগানের মাধ্যমে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারেও অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে অনেককে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর হাতে জাতীয় ও বিএনপি দলীয় পতাকা আছে। এ সময় তারা সরকার পতনের নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে চারপাশ। চল চল রোড মার্চ সফল কর’ স্লোগান ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ সংগীত গাইতে গাইতে নেতাকর্মীরা রোডমার্চ নিয়ে এগিয়ে যায়।
প্রতীকী কারাগারে খালেদা জিয়ার সাজে: যশোর মুড়লী মোড়ে সমাবেশ শুরুর পর উপস্থিত নেতা-কর্মীদের নজর কাড়ে খালেদা জিয়ার প্রতীকী কারাগার। এর ভেতর থেকে একটি শিশু খালেদা জিয়া সেজে সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল। একটি প্রিক্যাপের উপরে প্রতীকী কারাগারের বাইরে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসময় উৎসুক নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলতে দেখা যায়। পাশাপাশি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই গানও বাজতে শোনা যায়। প্রিক্যাপের উপরে থাকা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম বলেছেন, তিনি তার মেয়েকে খালেদা জিয়ার সাজে সাজিয়ে প্রতীকী কারাগারে আবদ্ধ করে সমাবেশস্থলে আসেন। মে র চারপাশে ঘোরে এই শিশু। এ সময় নেতা-কর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।