মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে চলাচলের একমাত্র রাস্তায় ঘর নির্মাণ করে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী পায়ে চলাচলের কথা থাকলেও চারটি পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনযাপন করছে। চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় গবাদি পশু ও ফসল নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন চারটি পরিবারের প্রায় ৩০ জন সদস্য। মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর মাঝপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় শত বছর ধরে বাপ দাদার সময় থেকে তারা ওই স্থানে বসবাস ওই পথ দিয়ে চলাচল ও মাঠের ফসল ঘরে তুলতেন। ভুক্তভোগী মজিদ দাবি করেন, গত ৬ মাস ধরে রাস্তার অংশটুকু পুরোপুরি নিজের দখলে রাখতে বিভিন্ন পাইতারা শুরু করে তারা। চলাচলের রাস্তা নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ দীর্ঘদিনের। সেই দ্বন্দের জেরে চলাচলের পথের উপর একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন আজিমউদ্দিন। অপরদিকে আরেক প্রতিবেশির ঘরের প্রাচির নির্মাণ করেন ওই জমির পথ ঘেষে। এতে পথটি চলাচলের প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জমি জবরদখল মর্মে মেহেরপুর অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ১৪৫ ধারায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন আজিমদ্দিন। পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিউজা উল জান্নাহ ওই নালিশী জমি ১ম পক্ষের ভোগদখলে থাকবে তবে ২য় পক্ষের পায়ে চলার পথে বাঁধা প্রদান থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেন। জমির দখলে থাকা আজিমউদ্দিন বলেন, জমি আমাদের দখলে আছে কিন্তু আমাদের কোন রেকর্ড নেই। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আদালতে মামলা করেছি যা এখনো চলমান। মামলায় যে রায় হবে আমরা মেনে নেব। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোন রাস্তা দিবো না।
আজিমদ্দিনের ভাতিজা মোশারফ বলেন, এটা অর্পিত সম্পত্তি। আমাদের রেকর্ড নেই। রেকর্ডের জন্য কোর্টে মামলা করা আছে। সেদিন এসিল্যান্ড ও পুলিশ এসে বলে এখান দিয়ে পথ দিতে হবে। আমরা পথ দিতে চাইনি এবং বলেছি এই জমি নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে, কোর্ট থেকে রায় না হওয়া পর্যন্ত কিছু করতে পারব না। তারপরও তারা রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করে চলে যায়। পরের দিন রাস্তা বের করার সময় আমার ছোট আব্বারা বাধা দিলে তারা ধাক্কা দেয় এবং পুলিশের গাড়িতে তোলে। পরে উপজেলাতে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করে। অবরুদ্ধ ভুক্তভোগী মজিত বলেন, একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় আজ আমরা গৃহবন্দী।
পরিবারের কেউ মারা গেলে কবরে নেওয়ার পথটুকুও নেই। আজিমউদ্দিনের করা মামলায় আদালত আমাদের পায়ে চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছেন। আমাদের পায়ে হাটার রাস্তায় বাঁধা দিতে নিষেধ করেছে কিন্তু তারা আদালতের আদেশ মানছে না। এসিল্যান্ড স্যার এসে রাস্তার ব্যবস্থা করলেও সেটাও তারা মানেনি। বরং তাদের বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জমিটি “খ” তফসিল ভুক্ত জমি। ৬ মাস আগে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা বের করেছিলাম। তখনও তারা মানেনি।
বেশ কয়েকদিন আগে আদালতের আদেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত রত্ন সার্ভেয়ার নিয়ে চলাচলের পথটি উন্মুক্ত করে সীমানা নির্ধারণ করে। তাৎক্ষনিক আজিমদ্দিনের পরিবারের লোকজন ও বাহিরের কিছু লোকজন এসে সরকারী কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। তারা সীমানা নিধারণের খুটি তুলে ফেলে দেয় ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন। সে সময় সরকারী কাজে বাঁধা দেওয়ার অপরাধে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। তাতেও তারা ক্ষান্ত না হয়ে আরও বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।