যশোর মণিরামপুরের নাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
যশোরের মণিরামপুরের ২২নং নাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে অনিয়মের মহোৎসব। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিহার মন্ডলসহ অপর ৩জন সহকারী শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও দেরীতে আসা যেন নিত্য দিনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নানা দাম্ভিকতায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়টির ব্যাপারে স্থানীয় অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত।
এছাড়াও বিদ্যালয়টির উন্নয়ন বরাদ্দের কাজেও নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্লিপ আর রুটিন মেইনটেন্স এর বরাদ্দকৃত অর্থ উপর মহলকে ম্যানেজ করে নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে পুরো টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি বছর ক্ষুদ্র মেরামতের অর্থও একই ভাবে নয়ছয় করার মানসিকতা আছে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। সম্প্রতি শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য দেয়া বরাদ্দ অর্থও লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া ভাউচার তৈরী করে টাকা তুলে ভাগাভাগি করে নেয়ারও চেষ্টা করছে। এ সব বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছে স্থানীয় অভিভাববক ও সচেতন মহল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি রয়েছে কয়েক মাস ধরে। এ সুযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিহার মন্ডল বিদ্যালয়টি একটি ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। ভবনটি পুরাতন হওয়ায় সেখানে পাঠদানের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। পলেস্তারের সাথে ছাদ ধসে পড়ছে। যে কোন সময়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া অব্যবস্থপনার কারণে বিদ্যালয়ের মাঠসহ ভবনের চারিদিকে ময়লা-আবর্জনায় ভরা। ভবনের বিভিন্ন স্থানে মাকড়ার বাসায় ভরপুর। শ্রেণিকক্ষে মশার উপস্থিতি লক্ষনীয়। সর্বপরি স্কুল ভবনটি পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনাসহ বাথরুম পর্যন্ত পরিস্কার করিয়ে থাকে। তিনি সরকারি বিভিন্ন কাজ কর্মের অযুহাত দেখিয়ে স্কুল ফাঁকি দেন এবং নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। এছাড়া সরকার থেকে প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য প্রাপ্ত টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সম্পদ লুটের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিহার মন্ডলের বিরুদ্ধে।
এদিকে বিদ্যালয়ে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৪জন শিক্ষক রয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষক দীপক বিশ্বাস শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসতে পারেন না। আসলেও সঠিকভাবে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতে পারেন না এবং বেশির ভাগ সময়ে ঘুমিয়ে থাকেন বলে শিক্ষার্থীরা জানায়। অপর সহকারী শিক্ষক অহেদুজ্জামান বর্তমানে নিজের ব্রেইনের সমস্যা হয়েছে বলে কোন ছুটির অনুমোদন ছাড়ায় ১ মাসেরও অধিক সময়ে অনুপস্থিত। মনিহার মন্ডলের ভাই সূজিত মন্ডলকে দিয়ে মাঝে মাঝে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করালেও তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বেদম প্রহর করার অভিযোগ আছে। এমনিই নানা সমস্যায় জর্জরিত এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৫০ থাকলেও আসলে সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ এর নীচে। সরেজমিনে প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিত স্কুলে আসে ১৫ থেকে ২০ জনের মত। বিষয়টি এরই মধ্যে অভিভাবক ও সচেতন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সংবাদ কর্মীরা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিহার মন্ডল তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করে কোন তথ্য দিতে অস্বীকার করে। সাথে সাথে তিনি এ বিষয়ে কোন পত্রিকায় নিউজ করলে দেখে নেবার হুমকি প্রদর্শন করেন। তিনি বলেন, আমি যা করি সেটা উপজেলা শিক্ষা অফিসের স্যারেরা জানেন। নিউজ হলে আমাদের কিছুই হবে না। স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের স্কুলে কোন অফিসার আসেন না। তাই আমাদের ক্লাসও হয় না। স্যারেরা এসে লাইব্রেরিতে গল্প করে আর ঘুমায়। সে কারণে প্রায় অর্ধেক ছাত্রছাত্রী অন্য স্কুলে চলে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিহার মন্ডল জানান, উল্লেখিত বিষয়ের কোন সত্যতা নেই। তাছাড়া ইতোমধ্যে আমাদের ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছেন কর্তৃপক্ষ। কোন ভবন না থাকায় ভয়ে-ভয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওখানে ক্লাস করি। তবে এবার ঘর মেরামতের জন্য যে টাকা পেয়েছি সেটাসহ কিছু ধারদেনা করে একটি টিনসেটের ভবন তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে। ওটা শেষ হলে ওখানে পাঠদানের কার্যক্রম চলবে।
জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহাকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) তৌহিদুর রহমান নূর নবী বলেন, ‘কোন অনুমতি ছাড়া একজন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। যদি তিনি অসূস্থ থাকেন তাহলে যথাযথ বিধি অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। যেহেতু তিনি কোন অনুমতি নেননি-সে কারণে সহকারী শিক্ষক অহেদুজ্জামান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে যথাযথ কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মো. কামরুল বাশার ওমর ফারুক বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।