পালকি এখন স্মৃতির জাদুঘর

আগের সংবাদ

শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা ভারতের

পরের সংবাদ

পরিবারের মধ্যে হতাশা, চৌগাছায় ১০ বছর ধরে নিখোঁজ ৭ ব্যক্তি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ৯:৩৫ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ৯:৩৮ অপরাহ্ণ

যশোরের চৌগাছায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে একই পরিবারের ৪ জনসহ সাত ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। মালায়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা আর ফিরে আসেনি। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নই ওদের যেন কাল হলো। সাতটি পরিবারে এখন হতাশা বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের একই পরিবারে ৪ জন মালায়েশিয়া যাওয়ার নাম করে নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন আতিয়ার রহমানের ছেলে অমিত হাসান মুকুল (৩০), হায়দার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান (৪০), মৃত বদরউদ্দিনের ছেলে ফুলজার হোসেন (৪৬), মৃত ছবেদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম খোকন (৪০)। এছাড়া একই গ্রামের মৃত আত্তাব হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭), রোস্তমপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে রমজান আলী (৪৫) ও দূর্গাবরকাটি গ্রামের উমসান আলীর ছেলে লিটন হোসেন (২৭) আজো নিখোঁজ।

তারা সকলে ২০১৩ সালে ১ জুন মালায়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু তারা কেউ আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। নিখোঁজদের পরিবার জানিয়েছে, অল্প টাকায় মালায়েশিয়া যাবার প্রলোভনে পড়ে তারা আদম ব্যাপারিদের খপ্পরে পড়ে। মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ ওরফে ফজলুর রহমান তাদেরকে ফুসলিয়ে পানি পথে মালায়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। ২০১৩ সালের ১ জুন তারা বাড়ি থেকে একযোগে বের হয়। কিন্তু তখনও পরিবারের সদস্যরা জানে না তারা বিদেশের উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করছেন।

জুন মাসের ১২ তারিখে অমিত হাসান মুকুল তার বাড়িতে ফোন করে জানান, আমরা সকলেই পানি পথে মালায়েশিয়ায় যাচ্ছি। ট্রলারে উঠা হয়ে গেছে এখনই রওনা দেব। ১২ তারিখের ওই কথাই তাদের পরিবারের সাথে শেষ কথা। মুকুলের স্ত্রী চামেলী খাতুন বলেন, যে নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল সেই নাম্বার বন্ধ পেয়েছি। বারবার চেষ্টা করেও ফোনে কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপর দশ বছরের বেশী সময় পার হলেও তার সন্ধান পায়নি। অতিকষ্টে দিন কাটে আমাদের। নিখোঁজ শরিফুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী রেশমা বেগম, ফুলজার রহমানের স্ত্রী রুপভান বেগম জানান, বহু চেষ্টা করেও তাদের স্বজনদের খোঁজ পাননি। তারা এখন দারিদ্রতা আর কষ্টের মধ্যে বসবাস করছেন। এ সময় তাদের চোখেমুখে ছিল উৎকণ্ঠা আর চরম হতাশা। ভূক্তভোগীরা জানান, নিখোঁজের ৩ মাস পর তারা মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই আদম ব্যাপারী রাজুর কাছে যান। তাদের স্বজনদের ফিরে দিতে চাপ দিতে থাকেন। এ সময় রাজু তার সহযোগী চট্রগ্রামের টেকনাফের অপর আদম ব্যাপারী রাশিদুল ইসলামের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন। টেকনাফের দালাল রাশিদুল তাদেরকে জানান, কোন সমস্যা নেই তারা দু’একের মধ্যে মালায়েশিয়ায় পৌঁছে যাবে। পৌছানোর পর চুক্তি মোতাবেক ২ লাখ ১০ হাজার করে টাকা দিতে হবে। কিছুদিন পরেই মুক্তদাহ গ্রামের ঘর জামাই দালাল রাজু তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রাতের আঁধারে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে টেকনাফ ও মুক্তদাহ গ্রামের দালালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তাদের স্বজন এমনকি কোন দালালের সন্ধান পাইনি ওই পরিবারগুলো।

বর্তমানে এ সকল পরিবারে দারিদ্রতা নেমে এসেছে। অভাব আর দারিদ্রের সাথে তারা যুদ্ধ করছে। অনেকের স্ত্রী এখন গার্মেন্টেসে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। নিখোঁজ আজিজুর রহমানের স্ত্রী দুটি সন্তান ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন। দাদীর কাছে থেকেই তারা অতিকষ্টে জীবন পার করছে। বলাচলে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে নিখোঁজদের পরিবার। তারা এও জানেনা পরিবারের লোকজন বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। বেঁচে না থাকলে তাদের লাশ কোথায়? আর বেঁচে থাকলে তারা কোথায় আছে। নিশ্চিত তথ্যটি পেতে অধীর অপেক্ষায় দিনগোনে ভূক্তভোগী পরিবারগুলো। কিন্তু আজও কোন খবর মেলেনি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের ফিরে পাওয়া বা তাদের খবর পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে ভূক্তভোগি পরিবারগুলো।

এসএমরা/জেআ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়