ঝিকরগাছার ঘোড়দায় নির্মাণাধীন ব্রিজে হাজারো মানুষের ভোগান্তি

আগের সংবাদ

কালীগঞ্জে সংখ্যালঘু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বৃদ্ধের জমি বিনা টাকায় লিখে নিলেন প্রভাশালী

পরের সংবাদ

সাতক্ষীরায় প্রকৃতি থেকে একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ৮:৫২ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ৮:৫২ অপরাহ্ণ

প্রকৃতি থেকে একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা! এক সময় প্রকৃতি ধাবরিয়ে বেড়ানো এ পাখি গুলো আজ কালের বিবর্তনে বাংলার আবহমান চির চেনা সবুজ প্রকৃতি থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলার এখানে ওখানে তাল গাছের পাতায় কত না মেধা শক্তি খাটিয়ে নিপুণ কারুকার্য করে নীড়কে গড়া সেই বাবুই পাখি।

কেন যেন মনে পড়ে গেল,বিখ্যাত কবি রজনীকান্ত সেনের কবিতার ভাষা। তার কবিতার ভাষায় তিনি বলেছেন, বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। হ্যাঁ আবহমান গ্রাম বাংলার বাসা তৈরির যে নিঁখুত কারিগর, কবির কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার নায়ক সেই বাবুই পাখি শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে তাল গাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি নিজেই আজ অস্তিত্ব সংকট বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের ধারণা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ একেবারেই বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির চিরচেনা বাবুই পাখির বাসা। অথচ আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা।

গত দুই দিন সাতক্ষীরা জেলার কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে এখন আর আগের মতো চোখেই পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কষ্টকর। প্রতিটি তালগাছে ১শ’ থেকে ১১০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ৮-১০ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবন ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়।

বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। নিচের দিকে কোন দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।

আশাশুনি সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস প্রফেসর মো. হোসেন বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙত। কিছু এখন আর সেই শব্দও শুনা যায় না। দেবহাটার কাজী মোল্লা গ্রামের কৃষক ওমর আলী বলেন, বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙত। সন্ধ্যা হলে তাদের বাসাই ফেরার দৃশ্য ছিল দেখার মত। কিচিরমিচির শব্দে সন্ধ্যাটা যেন এক অপরুপ মনোরম দৃশ্যে পরিণত হত। কিন্তু আমাদের পুরো এলাকা জুড়ে কোথাও আর বাবুই পাখি সহ তার দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যায় না।

বাবুই পাখি ও তার দৃষ্টিনন্দন বাসার বিলুপ্তির ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সরকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রকৃতি থেকে দিন দিন অনেক এ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের খাবার, উপযোগী বাসস্থানের জায়গা না থাকায় বাবুই পাখির বাসা হারিয়ে যাচ্ছে একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না।

তিনি আরোও বলেন, তালগাছ দীর্ঘমেয়াদি গাছ। তাই বাণিজ্যিকভাবে তালগাছের আবাদ হয় না। গ্রাম-গঞ্জ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তালগাছ। এর সাথে সাথে বাবুই এখন বাসা বাধারও জায়গা পায় না। তারপর মানুষ জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তুলছে অট্টালিকা। তাছাড়া প্রকৃতি থেকে তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাসা তৈরি করতে পারছে না পাখিরা। আর এই কারণে প্রজননও করতে পারছে না তারা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাবুই পাখির বংশ বিস্তারে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সেই সাথে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরোও বলেন, সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ একত্র হয়ে কাজ করতে হবে।

এসএমরা/জেআ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়