চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৮ ঘন্টায় ১৭ শিশুর স্বাভাবিক প্রসব

আগের সংবাদ

ঝিনাইদহে মিলছে না জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিভেনম, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

পরের সংবাদ

যশোরে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন নেই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:১১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

যশোর বড় বাজারসহ শহরের বিপনীবিতানগুলোতে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ চিঠি চালাচালি, আলোচনা ও পরিদর্শনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

শহরে জলাধার বা জল স য়ের ব্যবস্থা করা, বাজারের ভেতরে গভীর নলকূপ স্থাপন, ভৈরব নদের পানি প্রবাহ বাড়ানো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫০টি পানির ড্রাম রাখার কাগুজে সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি। এরইমধ্যে গত ২৮ আগস্ট আগুনে পুড়েছে বড়বাজার হাটচান্নি মসজিদ গলির চার দোকান। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পানি না পাওয়া আগুনের ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

চলতি বছরের এপ্রিলে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজার, শেরে বাংলা নগর বস্তিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অগ্নিকা-ের পর সারাদেশে অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অগ্নিসুরক্ষা বিভাগ।

এ নির্দেশনার আলোকে যশোর প্রশাসন তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বাইরে থাকা ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময়ের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ছিল, প্রতিটি বড় দোকান, প্রতিষ্ঠান, মার্কেটে পর্যাপ্ত ফায়ার ডিস্টিংগুইশার রাখা, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন যেন পুরনো সুইচ, দুর্বল তার বা ওয়ারিং ঘরে না থাকে, থাকলে সংস্কার ও মেরামত করা, গ্যাসে রান্নার ঘরটিতে হাওয়া-বাতাস চলাচলের পথ রাখা এবং জানালা খুলে রাখা, বড় বাজারসহ শহরে জলাধার বা জল স য়ের ব্যবস্থা করা, বাজারের ভেতরে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পানির উৎস হিসেবে গভীর নলকূপ স্থাপন, ভৈরব নদীতে পানির প্রবাহ বাড়ান, বড়বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫০টি পানির ড্রাম রাখা, শহরের পুকুর ভরাট বন্ধ করা প্রভৃতি।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ী নেতা, ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ভবন পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আগ্রহীদের অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু দৃশ্যপটে আসেনি কোনো উদ্যোগ।

ওই সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয় যশোরের বড় বাজার, কালেক্টরেট মার্কেট, চুড়িপট্টি, ফেন্সি মার্কেট, রেলবাজার। পূর্বে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত ফেন্সি মার্কেটে আগুন লাগে গত ২৮ আগস্ট রাতে। ভস্মীভূত হয় চারটি দোকান। এছাড়া ২০১৫ সালের ৬ মার্চ মধ্যরাতে কালেক্টরেট মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ১৯টি দোকান পুড়ে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০১২ সালের ৬ মে একই মার্কেটে অগ্নিকান্ডে ১০ দোকান পুড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর তিনদিন পর বড় বাজারের কাঠেরপুল মার্কেটে আগুন লাগে। এসব ঘটনার পাশাপাশি শহরের বড় বাজারের চুড়িপট্টি, ফেন্সি মার্কেটসহ স্থানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানোর ব্যবস্থা না থাকায় চিন্তিত ফায়ার বিভাগ। তারা এসব স্থানে পানির উৎস না থাকা ও গাড়ি প্রবেশের জায়গা না থাকায় ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়ে আসছে।
১০ সেপ্টেম্বর সরেজমিন দেখা যায়, বড় বাজারের কোথাও কোনো পানিভর্তি ড্রাম নেই। কোথাও গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়নি। জল স য়েরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পৌরশহরের কোনো পুকুর ভরাট বন্ধে পৌরসভা বা সংশ্লিষ্ট কাউকে কোনো পদক্ষেপ নিতে বা ভরাট বন্ধে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। এমনকি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানে না শহরে কতগুলো পুকুর আছে।

তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ,ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে কয়েকদফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবারও ১২টি নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। না মানলে আগামীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়মিতভাবে ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সোহেল রানা জানান, সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন তার নেতৃত্বে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন হচ্ছে, চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

যশোর বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর মোশাররফ হোসেন বাবু জানান, যশোরের জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহায়তায় ব্যবসায়ীদের অগ্নি প্রতিরোধের নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও এখন এর গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন। কারণ বাজারে অনেক সরু গলি রয়েছে, শহরের অনেক পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিটি দোকানে ও বাণিজ্যিক ভবনে পর্যাপ্ত ফায়ার ডিস্টিংগুইশার রাখার ব্যপারে বেশিরভাগ দোকান ও ভবন মালিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ফায়ার ডিস্টিংগুইশার সংগ্রহ করেছেন। অন্যরাও চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫০টি পানির ড্রাম রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ড্রামগুলো প্রস্তুত রয়েছে, কিন্তু আর স্থাপন করা হয়নি। জলাধার স্থাপনের জায়গা বড়বাজারে নেই। এমনকি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্যেও স্থান পাওয়া যাচ্ছে না।

বাজারের মধ্যে পৌরসভার কিছু জায়গা আছে। পৌরসভা চাইলে সেখানে নলকূপ স্থাপন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা খরচ বহন করতে রাজি।

সার্বিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো.মামুনুর রশিদ জানান, এখানে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যেকোনো কারণে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই পানির দরকার হয়, বড়বাজার ও পাশের মার্কেটগুলোর জন্যে লালদীঘি ও ভৈরবের পানি ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি ও মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আপতত সবাইকে নিজস্ব ব্যবস্থায় আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তারপরও উল্লেখযোগ্য এবং দৃশ্যমান কিছু হয়নি। বৃহত্তর যশোরে ১৪০টি প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যশোরের ৬৬টি চিঠি আছে।

তিনি জানান, বড়বাজারে পানির স য় বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি, তবে অনেক ব্যবসায়ী অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম কিনেছেন। তাছাড়া কালেক্টরেট মার্কেটের সকল বৈদ্যুতিক সুইচকে একটি নিয়ন্ত্রণ সুইচের আওতায় আনা হয়েছে। এতে শর্ট সার্কিটের কারণে ঘটা আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যেতে পারে।

অবশ্য পৌরসভার পুকুর ভরাট বন্ধ হচ্ছে না। শহরের অনেক পুকুর হারিয়ে গেছে, ফলে পানি সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বড়বাজারের হাটচান্নির অগ্নিকাণ্ডের সময় গাড়ি ঢোকানো ও পানি সংগ্রহ করা খুবই কঠিন হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়