যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ দুনীর্তির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা তার বৈধ আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একই স্টেশনে একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারি দুই থেকে তিন বছরের অধিক সময় থাকতে পারবেন না। অথচ সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলাম যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এক নাগাড়ে ৬ বছর ধরে কর্মরত আছেন। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত দাপটের সাথে সীমাহীন ঘুষ দুর্নীতি করে চলেছেন। এর আগে ২০১৩ সালেও সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলাম একই উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে একাধিক উপ-সহকারি প্রকৌশলী থাকা স্বত্বেও অদৃশ্য ক্ষমতার বলে সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলাম একচেটিয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে আজ তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। পক্ষান্তরে ওই অফিসে কর্মরত ৩/৪ জন উপসহকারি প্রকৌশলী কর্মরত থাকা স্বত্বেও উন্নয়ন প্রকল্পের সাইড দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না তাদের। এদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলাম যশোর শহরের নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়া এলাকায় ৫ শতক জমির উপর ৬তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট বিলাস বহুল আলীশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
একজন প্রকৌশলীর মতে, বর্তমান সময়ে ওই বাড়িটি নির্মাণ করতে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। যা তার বৈধ আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। শুধু তাই নয়, ঘুষ দুর্নীতির অর্থ দিয়ে সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলাম যশোর সদরের সুলতানপুর ও হামিদপুর মৌজায় আরও ৫টি জমি খরিদ করেছেন বলে জানা গেছে। নামে বেনামে এসব সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র আরও জানায়, সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের সাথে অফিসের বড় কর্তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। তাই বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প তাকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে অফিসের বড় কর্তার পকেটে যাচ্ছে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ঠিকাদার তুহিনুল ইসলামের অত্যাচারে অতিষ্ট বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তারা অবিলম্বে যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
চলতি অর্থবছর হামিদপুর মধ্যপাড়া থেকে কচুঁয়া নতুন বাজার মাঠপাড়া পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নে পুরো রাস্তায় ২নম্বর ইট ও মাটি মিশ্রিত বালি ব্যবহার করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করলে এর বাস্তব প্রমাণ মেলবে। এই রাস্তার কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভাই ২০১৮ সালের কাজ, তখন ইটের দাম ছিলো কম, তাই বর্তমানে ১নম্বর ইট কিনে ওই রাস্তার কাজ করে ঠিকাদার উঠাতে পারবেন না। ব্যাপক লোকসানের সম্মূখীন হবেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তাই তাকে একটু ছাড় দেয়া হচ্ছে। অথচ হামিদপুর থেকে কচুঁয়া পর্যন্ত নির্মিত রাস্তাটি উন্নয়ন করার সাথে সাথেই বেশিরভাগ জায়গায় রাস্তা দেবে গেছে। স্থানীয় জনসাধারণ এ রাস্তাটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এর আগে বাগেরহাট মোড়েলগঞ্জ ও মোল্লাহাট উপজেলায় সার্ভেয়ার পদে দায়িত্ব পালনকালে কোটি টাকার স্যালবেজ বিক্রি করার দায়ে তুহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এ অভিযোগে তাকে যশোরে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। একই অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে যশোর সদরে একটি তদন্ত কমিটি আসে। তদন্ত কমিটি গত ২০২১—২০২২ অর্থবছরে যশোর সদরে সংস্কারকরণ কাজের অনিয়মের তদন্ত করেন। তদন্তে সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পান। খুবই অসচ্ছল পরিবারের সদস্য সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলাম চাকুরি পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেন বলে অনেকের অভিযোগ। এব্যাপারে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন। সচেতন মহল তদন্ত পূর্বক সার্ভেয়ার তুহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।