চলতি মৌসুমে
চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছে সাতক্ষীরার চাষীরা। বাজারে পাটের যে দাম, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। গত দুই মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেলেও, এবার দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পাট চাষীরা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। তাই পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষীরা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পাট চাষ করতে যা খরচ হয়েছে, বিক্রি করে ওই খরচ উঠছে না। বিশেষ করে ইজারা নিয়ে কিংবা বর্গাচাষিদের বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ সরকারিভাবে সরবরাহ করা রবি পাট-১ (দেশি) জাতের বীজে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। ফলে লোকসান বেড়েছে। চলতি বছর পাটের মূল্য না পাওয়ায় তাঁরা আগামী বছর আর পাট চাষ করবেন না। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ১১ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দেশি জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হেক্টর জমিতে, আর তুষা জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশি জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৮২ হেক্টর জমিতে আর তুষা জাতের পাট আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৭৭১ হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি মৌসুমে ২৩৩ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার নগরঘাটা এলাকার পাটচাষি শফিকুল ইসলাম হৃদয় বলেন, গেল বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। খরচ বাদ দিয়ে যে পাট হয়েছিল, তাতে বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছিলেন ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। পাটের আড়ৎ ব্যাবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম জানান, গত বছর পাট কিনেছিলাম আট হাজার টাকা মণ। শেষের দিকে ক্রেতা না থাকায় প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদনের জন্য কৃষকদের আগাম টাকা দিয়েছিলেন। ওই সব কৃষকদের কাছ থেকে শুধু পাট কিনছেন বাধ্য হয়ে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমি পাট চাষের জন্য উপযোগী করতে ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয় ২২ হাজার ১৫০ টাকা। বিঘাপ্রতি তুষা জাতের পাট উৎপাদন হয় ১০ মণ আর দেশি পাট উৎপাদন হয় ৯ মণ। সেই হিসাবে ১০ মণ পাট বিক্রি হয় ১৮ হাজার টাকায়। পাশাপাশি এক বিঘা জমির পাটখড়ি বিক্রি করা যাচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম রূপান্তর প্রতিদিনকে জানান, পাট উৎপাদনের পরপরই সব কৃষক একসঙ্গে পাট বাজারে নিয়ে গেলে আড়ৎ মালিকরা তাঁদের ইচ্ছেমতো মূল্য দেন। যদি কিছুদিন রেখে কৃষক বিক্রি করেন, সে ক্ষেত্রে দাম ভালো পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ হলে কৃষকেরা লোকসানে পড়ত না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।