যশোরে নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া, হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ

আগের সংবাদ

নড়াইলে পৌর মহিলা আ.লীগের উঠান বৈঠক

পরের সংবাদ

অভয়নগরে সরকারী সম্পত্তি বিক্রি করাই সৌমিত্রের নেশা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ , ৯:১৬ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ , ৯:১৬ অপরাহ্ণ

যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভবানিপুর মৌজায় ৭০ শতক সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভুমি) সহযোগিতায় উপজেলার কোদলা গ্রামের জনৈক সৌমিত্র রায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই জমি বিক্রি করছেন। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রতি শতক জমি ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে সৌমিত্র রায় যাদের নিকট থেকে টাকা নিচ্ছে শুধুমাত্র তাদের নামেই ভুমি অফিস থেকে বন্দোবস্ত দেয়া হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারছেনা দখল থাকলেও তাদেরকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২০২১ সালে ৬ জানুয়ারি ভুমি মন্ত্রনালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত পরিপত্রে অর্পিত সম্পত্তি কোনো প্রকার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হলেও তা মানা হয়নি। ওই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। হাল রেকর্ডে ধানী থাকলেও তা পরিবর্তন করে বানিজ্যিক করা হয়েছে।

জানা যায়, যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভবানিপুর মৌজায় ৬১ খতিয়ানের বিভিন্ন দাগে অবিনাশ চন্দ্র নাগের কণ্যা সুরমা নাগের এক একর ৮৭ শতক জমি রয়েছে। তিনি ভারতে চলে গেলে ১৯৮৪ সালে পুরো জমি শত্রু সম্পত্তি হয়ে যায়। ওই জমির মধ্যে ১/১ খাস খতিয়ানে মরিচা বাজারে এসএ ৩৯, ৪২ ও ৪৩ দাগে এবং আর এস ২৪৪ এবং ২৪৫ দাগে ৭০ শতক জমি উপজেলার কোদলা গ্রামে নিরাপদ বিশ্বাসের পুত্র স্বপন কুমার বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে বন্দোবস্ত নিয়ে সরকারের অর্পিত সম্পত্তি নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ করে তার নিকট আত্বীয় সৌমিত্র রায়ের মাধ্যমে মাসিক ভাড়া দিয়ে তা আদায় করতো। গত ৩/৪ বছর আগে ভাড়াটিয়ারা জানতে পারেন ওই জমি সরকারি সম্পত্তি। যে কারণে তারা ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় স্বপন কুমার বিশ্বাসের প্রতিনিধি সৌমিত্র রায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভুমি) সহযোগিতায় ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে থাকে। দখলকৃত ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, সহকারি কমিশনারের (ভুমি) নিকট লিজ পাওয়ার আবেদন করলেও তারা লীজ পায়নি। সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বারবার যোগাযোগ করলে তারা সৌমিত্র রায়ের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সৌমিত্র মোটা অংকের টাকা দাবী করে একথা ওই কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উপরোন্ত তাদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর উচ্ছেদকৃত ৪২ জন ব্যবসায়ী গত ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিকার চেয়ে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও কোন সুফল পায়নি। ওই ৭০ শতক জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বানিজ্যিক উদ্যেশ্যে ব্যবহার দেখিয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাস ২০২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী উপজেলা ভুমি অফিস থেকে ১৫ হাজার ২৫০ টাকায় বন্দোবস্ত নেয়। স্বপন কুমার বিশ্বাস বন্দোবস্ত নিয়ে তার নিকট আত্বীয় সৌমিত্র রায়ের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনারের (ভুমি) সহযোগিতায় প্রতি শতক জমি সাড়ে তিন লক্ষ টাকা থেকে চার লক্ষ টাকা করে বিক্রি করছে। সৌমিত্র যাদের নিকট বিক্রি করছে ভুমি অফিস থেকে তাদেরই বন্দোবস্ত দেয়া হচ্ছে। যাদের বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তারা অনেকেই কখনোই দখলে ছিলো না। মিথা প্রতিবেদন তৈরী করে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। অনেকে বন্দোবস্ত নিয়ে আবার সাবলেট দিয়েছেন। খোকন কুমার বিশ্বাস এক শতক জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বাশুয়াড়ী গ্রামের দিপংকরকে ভাড়া দিয়েছেন। তিনি সেলুনের ব্যবসা করছেন। মুস্তাইন রহমান একশতক জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বেশীদামে জামাল হোসেনের কাছে বিক্রি করেছেন। লীজ পেতে স্বশরীরে আবেদন করার নিয়ম থাকলেও এক বৎসর বিদেশে মিশনে থাকা লাভলু বন্দোবস্ত পেয়েছেন। খোকন কুমার বিশ্বাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে দিপংকর দাসকে ভাড়া দিয়েছেন। মুস্তাইন রহমান বলেন, আমি বন্দোবস্ত নিয়েছি। কিন্তু আপাতত জামাল উদ্দিন ব্যবসা করছে। আমার যখন প্রয়োজন হবে তখন ছেড়ে দিবে।

বাশুয়াড়ী গ্রামের রুমিচা বেগম দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ ওই জমিতে হোটেল ব্যবসা করতেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমু (সৌমিত্র) আমাকে ২ লক্ষ টাকা দিতে বলে। আমি টাকা কোথা থেকে দেব। টাকা দিতে না পারায় সমু (সৌমিত্র) আমাকে রাতের আধারে আমার ঘর ভেঙ্গে দেয়। এবং হোটেলে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এরপর আমি স্যারের (সহকারি কমিশনার (ভুমি) ) অফিসে এবং ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। তাতেও কোন কাজ হয়নি। বাজারে রাস্তার পাশে এক শতক জমির উপর টিনসেডের ঘরে দীর্ঘদিন চাউলের ব্যবসা করতেন উপজেলার বাসুয়াড়ী গ্রামের আলামিন শেখ। তাকে উচ্ছেদ করার পর ৩/৪ মাস আগে সেখানে চাকোই গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে নূর মোস্তফা আধাপাকা টিনসেডের ঘর নির্মাণ করে ওষুধের ব্যবসা শুরু করেছেন। নূর মোস্তফা বলেন, একশতক জমির জন্য সৌমিত্র রায়কে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছি। এরপর তার কথামত ভুমি অফিসে জমি বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করি। সেখানে সাত হাজার টাকা জমা দিয়ে কয়েকদিন আগে নিজের নামে এবছরের জন্য জমির বন্দোবস্ত পেয়েছি। মো: আরিফুল ইসলাম জানান, আমার এক শতক জমি বন্দোবস্ত পেতে সৌমিত্রকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন দখলে থাকা মো: হুমায়ুন কবীর জানান, আমি দীর্ঘদিন ওই জমিতে ঘর করে ব্যবসা বানিজ্য করে আসছি। সৌমিত্র আমার কাছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দাবী করে। আমি টাকা না দিয়ে বন্দোবস্ত পেতে আবেদন করি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করি। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে সৌমেনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি স্যারকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) বলেছি সৌমেন আমার কাছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা চাচ্ছে। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথাই না শুনে সৌমেনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

এব্যাপারে সৌমিত্র রায় বলেন, ওদের কাছ থেকে সাড়ে তিনলক্ষ টাকা নিলেও আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনাকেও (ভুমি) কিছু দিতে হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় আমি ওখানে দখল থাকাদের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছি। ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে দিতে হবে বলে টাকা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের কথা না বললে ওরা তো টাকা দেবে না। তাই উনাদের কথা বলেছি। স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ওই জমি আমি দীর্ঘদিন লীজ নিয়ে ভোগ দখলে আছি। অনেক সমস্যার কারণে আমার ভাই সৌমিত্রকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছি। অভয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) থান্দার কামরুজ্জামান জমি বন্দোবস্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিদেশে থাকা ব্যক্তি ও বন্দোবস্ত নিয়ে অন্যকে লীজ দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন ( সদ্য বিদায়ী) বলেন, বিধি মোতাবেক ওই জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। তিনি তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়