যশোরের বাজারগুলোতে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভোক্তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। মাছ, চাল, ডাল, তেল, চিনি, আলু, আটা, ময়দা, সবজিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। যেভাবে দাম বেড়েছে তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি দামের কারণে ডাল-ভাত-আলু জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ পরিবার।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভেঙে গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভোক্তাদের মাঝে। কিন্তু বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। প্রতিটি ডিমের দাম ১২.৫০ থেকে ১৪ টাকা। একাধিক মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১৫ টাকা।
সোমবার যশোরের খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা। দেশি রসুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা। প্রতিকেজি আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিলিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা। আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৩-৪৫ টাকা। চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩২ টাকা। ডাল ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০-১৪০ টাকা। এদিকে কাচাঁবাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও ভোক্তাদের নাগালের বাইরে এখনও।
মানুষের জীবনযাত্রার খরচ জ্যামিতিক হারে বাড়লেও আয় বাড়ছে গাণিতিক হারে। এতে অধিকাংশ ভোক্তার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পআয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। পুষ্টির চিন্তা কেউ মাথায় আনতে পারছেন না।
যশোর সরকারি এম এম কলেজ শেখ কামাল ছাত্রাবাসের বাজারকারী আফজাল হোসেন রুপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রাবাসে প্রায় ১০০ আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। স্বাভাবিক জীবনধারণ ও পড়াশোনা ঠিকমত চালিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন তা বাজেটের মধ্যে সম্ভব হচ্ছে না। সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন প্রতিদিন। কিন্তু যে বাজেট তাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীদের শরীরের সঠিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।’
শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা মো. নাইম হোসেন বলেন, ‘আমার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা লাভ আসে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। দুই মেয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করে। বাড়ি ভাড়া, চাল, মুদি বাজার, কাঁচা বাজার, বিদ্যুৎ বিল, মোবাইল বিল, ইন্টারনেট বিল, গ্যাস সিলিন্ডার, চিকিৎসাসহ সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা। ফলে নিত্যপণ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে আর যে টাকা আয় করছি, তা দিয়ে এখন আমি সব খরচ বহন করতে পারছি না। একটু একটু করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। তবে আগে মাঝে মাঝে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেও এখন তা পারছি না। বেঁচে থাকতে প্রয়োজনীয় খাবার রান্না ছাড়া কোনো ধরনের ভালো-মন্দ খাবার জুটছে না। এমন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতেই খুব কষ্ট হচ্ছে’।
যশোরের বড় বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা বে-সরকারী চাকরিজীবী মো. শাহিন মিয়া বলেন, বাজারে এসে দেখি সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। যে বাজেট নিয়ে বাজারে এসেছি তা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় সব বাজার করতে পারব না। এভাবে যদি দিন যেতে থাকে তাহলে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে উঠবে। আর এসব দেখার যেন কেউ নেই।
চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মেহিদী হাসান রুপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দাম শুনে এখন ভয় হয়। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। বিভিন্ন অজুহাত ও ভোক্তাকে জিম্মি করে অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু যে বা যারা এসব দেখবে তারা এক প্রকার নির্বিকার। পরিস্থিতি এমন-ব্যয়ের সঙ্গে আয় না বাড়ায় আমাদের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই পণ্য কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে’।
সংশ্লিষ্ঠ সোর্স বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অনেক পণ্য আছে যেগুলো আমাদের আমদানি করতে হয়। সেক্ষেত্রে ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বেড়েছে। পরিবহণ ভাড়াও বেড়েছে। যার প্রভাব পণ্যের ওপর গিয়ে পড়েছে। তবে অসাধু পন্থায় যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।