প্রকৃতি কন্যা সাদিয়া আয়মান

আগের সংবাদ

সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ইসি বদ্ধপরিকর

পরের সংবাদ

শিক্ষক জাকিরের প্রতারণার ফাঁদে সহকর্মী-শিক্ষার্থী, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ , ৪:২৬ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ , ৪:২৬ অপরাহ্ণ

যশোর সদর উপজেলার নূরপুর গ্রামের পিকুল হোসেনকে কাস্টমস অফিসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুই দফায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যশোর সরকারি সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জাকির হোসেন। চার বছরেও পিকুলকে চাকরি দিতে পারেননি জাকির হোসেন। এদিকে চেকের মাধ্যমে গ্রহণ করা ওই টাকাও তিনি ফেরত দিচ্ছেন না। উল্টো প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালকের (কলেজ-১) কাছে এমন লিখিত অভিযোগ করেছেন পিকুল হোসেন। শুধু পিকুল হোসেন না, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে জাকির হোসেনের কাছে ইংরেজি কোচিং নিতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এভাবেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লিখিত অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে জাকির হোসেন সরকারি সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তার সহকর্মী সহকারি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি ও কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পার্সোনাল গ্রান্টার (ব্যক্তিগত জিম্মাদার) হিসেবে দেখিয়ে সিটি ব্যাংক, যশোর শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক থেকে হাবিবুর রহমানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সহাকরি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি সিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে নতুন যোগদান করেছি। তখন আমার সিনিয়র সহকর্মী জাকির হোসেন বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড উত্তোলনের কথা বলে আমার জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি ও স্বাক্ষর নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে আমাকে পারসোনাল গ্রান্টার হিসেবে ব্যবহার করে সিটি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। তিনি ওই ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন না। এদিকে ওই ব্যাংক থেকে আমাকে প্রতিনিয়ত ফোন করে চাপ সৃষ্টি করছেন। যা আমার জন্যে খুবই বেদনাদায়ক।

জাকির হোসেনের প্রতারণা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে হাবিবুর রহমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। চাকরি দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে উপ-পরিচালক অধ্যাপক ওহেদুজ্জামান ও সহকারি পরিচালক (কলেজ-২) তানভির হাসানকে সরেজমিন তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৭ মে অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করেন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ওহেদুজ্জামান বলেন, আমরা সরেজমিনের তদন্ত পরিচালনা করেছি। অভিযুক্ত ব্যক্তি, অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের বক্তব্য শুনেছি ও লিখিত নিয়েছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হবে। তদন্তের তিন মাসের মধ্যেও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারলেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ওহেদুজ্জামান বলেন, কতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে সেটা চিঠিতে বলা নেই। তবে সরেজমিনে তদন্ত শেষে আমি হজ্জ পালনের জন্যে সৌদি আরবে ছিলাম। এজন্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হচ্ছে।

প্রতারণার স্বীকার পিকুল হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে লেখাপড়ার সময়ে জাকির হোসেন স্যারের কাছে ইংরেজি বিষয়ে কোচিং করতাম। সেই সময়ে জাকির স্যারের সঙ্গে পরিচয়। তখন তিনি বলেন, উপর মহলে আমার যোগাযোগ আছে, ৫ লাখ টাকা দিলে যশোর কাস্টমস অফিসে চাকরি দেওয়া যাবে। স্যারের কথায় আশ্বস্থ হয়ে অনেক কষ্ট করে দুই দফায় ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে জাকির স্যারকে পাঁচ লাখ টাকা দিলাম। কিন্তু চার বছরের মধ্যেও স্যার আমার চাকরি দিতে পারেননি। এরপর টাকা চাইতে গেলে জাকির স্যার হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। খারাপ আচরণ করছেন। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের তদন্ত দল আমাকে ডেকে বক্তব্য নিয়ে গেছে। জাকির হোসেনের প্রতারণা স্বীকার হয়েছেন আরো অনেকে। তাদের মধ্যে যশোরের কেশবপুর উপজেলার বরণডালী গ্রামের শওকত হোসেন। ২০২২ সালের ৩ জুন জাকির হোসেনের প্রতারণা তুলে ধরে সিটি কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, ‘আমার তিন মেয়ে সরকারি সরকারি মাইকলে মধুসূদন কলেজে লেখাপড়া করার সময়ে জাকির হোসেনের কাছে ইংরেজি পড়তো। তখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিতেন জাকির হোসেন। এরপর ২০১৮ সালে জাকির হোসেনকে নগদ ছয় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কারো চাকরি দিতে পারেননি। টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুল মালেকের কাছ থেকেও জাকির হোসেন সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবদুল মালেক এ বিষয়ে ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর যশোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগে বলা আছে, ‘স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে পূর্ণ সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে জাকির হোসেন প্রায় আসতেন। ওই কর্মকর্তা আমার স্যার ছিলেন। এজন্যে জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় ও সম্পর্ক হয়।

তিনি আমাকে জানান, সামনে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ পরীক্ষা আছে। আপনার কোনো লোক থাকলে নিয়োগ করা যাবে। তখন আমি তার উপর বিশ্বাস রেখে আমার আত্মীয় স্বজনদের জানাই। আত্মীয়রা জমি বন্ধক রেখে ধার দেনা করে সাত লাখ টাকা দেন। ওই নগদ টাকা তার কাছে দিয়েছি। চাকরি তো হয়নি বরং ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এ সব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্যে কয়েকদফা যশোর সরকারি সিটি কলেজের সহকারি অধ্যাপক জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি এই প্রতিবেদকের নাম ও পরিচয় দিয়ে তার হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

আর এই বিষয়ে সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.জামশেদ আলী বলেন, জাকিরের প্রতারণায় শত শত ভুক্তভোগীরা আমার কাছেসহ বিভিন্ন দপ্তরে শত শত অভিযোগ দিয়েছে। যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শিক্ষামন্ত্রনালয়ের সচিবরাও তদন্ত করেছে। তিনি জানান, প্রতিদিনই কোন না ভুক্তভোগী আমার কলেজে আসে তার খোঁজ নিতে। নিঃস্ব হওয়া অনেকেই ক্যাম্পাসে তার কাছে আকুতিও করতে দেখা গেছে। জাকির হোসেন রাজকীয় জীবন যাপন করেন। ব্যক্তিগত (পাইভেট) গাড়ি চড়ে তিনি কলেজে যান। ওই গাড়িতে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যান। প্রতারণার টাকায় ঢাকার র্পূবাচলে তিনি একটি প্লট কিনেছেন বলে জাকির হোসেনের সহকার্মীরা জানান। জাকির হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে যশোর শহরেই তিনি বসবাস করেন।

এসএমরা/জেআ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়