কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর রাথুরা গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ গত দেড় যুগ ধরে বিলেতি ধনেপাতা চাষ করে চলেছেন। এই ধনেপাতাই এখন তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। এক দিকে তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিদের চাষ করা বিলেতি ধনেপাতায় কর্মসংস্থানও হচ্ছে স্থানীয় অনেকের।
পাশাপাশি এ উপজেলার উৎপাদিত পাতা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। কথা হয় রাথুরা গ্রামের কয়েক জন নারী শ্রমিকের সঙ্গে। তারা জানান, এক সময় তাদের সংসারে অনেক অভাব ছিল। এখন তারা এই ধনেপাতার খেতে কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন এবং তা দিয়েই তারা সংসার চালাচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নারী শ্রমিকরা কাজ করেন। এক কেজি ধনেপাতা বাজারজাতের উপযোগী করে দিলে মজুরি হিসেবে তিন টাকা পাওয়া যায়। এতে তাদের সারা দিন প্রায় ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার কাজ হয়।
মোক্তারপুর ইউনিয়নের নামা রাথুরা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব চাষি ধীরেন্দ্র মণ্ডল জানান, তিনি ১০ শতাংশ জমিতে বিলেতি ধনেপাতার চাষ করেছেন। ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লাখ টাকার পাতা বিক্রি করেছেন। জমিতে ধনেপাতার ভালো চাষ হওয়ায় কম খরচে বেশি লাভবান হয়েছেন।
একই গ্রামের আরেক চাষি হরিদাস বলেন, গ্রামের শতাধিক পরিবার ধনেপাতা চাষ করেছে। প্রত্যেক পরিবারের চার-পাঁচ জন করে কাজ করছেন। এতে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে ২০০৭ সাল থেকে ধনেপাতার চাষ শুরু হয়েছে। প্রথম প্রথম অন্যত্র থেকে পাতার বীজ সংগ্রহ করে চাষ হতো। এখন অনেকেই বীজ তৈরি করতে পারেন। দূর থেকে কাউকে বীজ কিনে আনতে হয় না।
ধনেপাতার ক্রেতা পাইকার শাহ আলম বাশার জানান, তিনি ধনেপাতা কিনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিভিন্ন আড়ত ও হোটেলে চড়া দামে বিক্রি করেন।
উপজেলা উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, কালীগঞ্জে বিলেতি ধনেপাতার চাষ দিন দিন বাড়ছে। গত দুই বছরে স্বল্প পরিসরে চাষ হলেও, এখন প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে বিলেতি ধনেপাতা চাষ হচ্ছে। এ উপজেলা রাজধানীর খুব লাগোয়া হওয়ায় কৃষকরা সরাসরি বাজারজাত করে লাভবান হন। বিঘাপ্রতি ২ লাখ টাকা খরচ হলে, তা প্রায় ৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম জানান, বিলেতি ধনেপাতা লাভজনক ফসল। কালীগঞ্জের বিলেতি ধনেপাতা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।