নান্দাইল উপজেলায় দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎবিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে ২-৩ ঘণ্টা পরপর ৫-৭ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ এলেও রাতে একেবারেই থাকে না। এ কারণে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কলকারখানা। বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানা চালু রাখতে গিয়ে ডিজেল ক্রয় বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে উৎপাদন খরচে। সারারাত বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়িতে গিয়ে ঘুমাতে পারছেন না পোশাক কারখানার কর্মীরা। এ কারণে প্রতিদিনই কারখানায় অনুপস্থিত থাকছেন অসংখ্য কর্মী।
নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বাঁশহাটী বাজারের দুই পাশে রয়েছে টার্গেট ফাইন নিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ম্যাজিক সোয়েটার লিমিটেড নামে দুটি কারখানা। গত মঙ্গলবার দুপুরে টার্গেট ফাইন নিট ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা যায়, সেটি জেনারেটর দিয়ে চলছে। অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতিদিন তাদের কারখানা এলাকায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
কারখানার প্রোডাকশন ডিরেক্টর কামরুজ্জামান জানান, বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানা চালু রাখতে প্রতিদিন ডিজেল ক্রয় বাবদ তাদের খরচ হয় দুই লাখ টাকার ওপর। এতে প্রতিমাসে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ২২ থেকে ২৩ লাখ টাকা। ব্যাপক বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে এখন বিল আসছে মাসে ১১ থেকে ১৩ লাখ টাকা।
কারখানার ব্যবস্থাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া মামুনের ভাষ্য, কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎবিভ্রাটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাদের আরও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। সারাদিন কাজ করে রাতে বাড়িতে গিয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ঘুমাতে পারছেন না অনেক কর্মী। এ কারণে পরদিন অনেকেই কাজে অনুপস্থিত থাকছেন, যা উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলছে।
কথা হয় ম্যাজিক সোয়েটার লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর দাবি, এখানে ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাট। এতে কারখানার যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়। এ জন্য কারখানাটি শুরু থেকেই জেনারেটর দিয়ে চালানো হচ্ছে। এতে তাদের প্রতিদিন ৩০০ লিটার ডিজেল পুড়তে হচ্ছে।
নান্দাইল পৌর শহরের একটি করাত কলের মালিক জানান, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কাজ চলে। বর্তমানে ওই সময়ে প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিভ্রাট। এতে করাতকল চালানো না গেলেও শ্রমিকদের যথাযথ পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে বলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁর।
গতকাল বুধবার উপজেলার কয়েকটি গ্রামে খবর নিয়ে জানা গেছে, তিন ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ আসে। ৫-৭ মিনিট থেকেই চলে যায়। খামারগাঁও গ্রামের এক গৃহবধূ জানান, বুধবার সারাদিনে এক ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাননি তারা। পালাহার গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান ফয়সালের দাবি, তাদের গ্রামে কোনো রাতেই বিদ্যুৎ থাকে না।
জানতে চাইলে নান্দাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, নান্দাইলে বিদ্যুদের চাহিদা হচ্ছে ৩১ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১২, ১৩ কখনও বা ১৪ মেগাওয়াট। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তীব্র গরমে বিদ্যুৎবিভ্রাট আরও বাড়বে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।