তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অববাহিকার বাসিন্দারা। শুধু নদীভাঙনের কারণেই উত্তরের পাঁচ জেলায় প্রতিবছর ১ লাখ কোটি টাকার বেশি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এতে ২ কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে মহাদুর্যোগ।
ভুক্তভোগী জনগণকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা চুক্তি সই, অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, পানির প্রবাহ বাড়াতে ব্যাপক খনন এবং ভাঙনরোধে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য।
বৃহস্পতিবার রংপুর নগরীর একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে রংপুর বিভাগে আছে ১৮টি। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই হয়। কিন্তু দেশটির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের অনৈক্যের কারণে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি আর আলোর মুখ দেখেনি। এতে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে তিস্তা নদী মরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আর বর্ষায় তিস্তার তীব্র ভাঙনে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি সবকিছুই নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তার পানি চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কেন জরুরি তা তুলে ধরা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের কারণে নদীটির শাখা-প্রশাখা ও উপনদীগুলো ভরাট, দখল ও তিস্তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পরিণতিতে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টান পড়েছে ভূগর্ভস্থ উৎসে। নদীর পানির চাপ না থাকায় সাগরের নোনাপানি দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে ওই অঞ্চলের মৎস্য চাষ, ফসল আবাদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলছে। তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ধাপে ধাপে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাজের উদ্বোধনসহ ছয় দফা দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী তিস্তা তীরের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শহরে প্রচারপত্র বিলি, হাট সভা, পথসভা ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন পরিষদের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, সদস্য বখতিয়ার হোসেন শিশির, আকতারুজ্জামান, জাসদ নেতা সাখাওয়াত হোসেন রাঙ্গা, রংপুর জেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।