নিজ দলের নেতাকর্মীর তোপের মুখে পড়েছেন কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য শেখ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। এবার নেতাকর্মী ‘বহিরাগত এমপি’ মেনে নিতে চাইছেন না। এই কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন এ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কমপক্ষে ছয়জন।
নেতাকর্মী জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পান আক্তারুজ্জামান বাবু। তাঁর বাড়ি জেলার রূপসা উপজেলায়। এ কারণে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিস্মিত হন অনেকে। ওই নির্বাচনে তিনি সহজে জয় পেলেও এবার নিজ দলের মধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। নেতাকর্মীর অভিযোগ, নির্বাচনী এলাকায় নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন তিনি। এ নিয়ে এখন দ্বন্দ্ব প্রকট। বর্তমানে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উপজেলা পর্যায়ের নেতারা সংসদ সদস্যের কঠোর সমালোচনা করছেন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীর অনেকে তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না। ২০২১ সালের ১ জুন কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ পরিদর্শনে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন সাংসদ বাবু। সে সময় স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল– তাঁর লোকজন বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম করায় বারবার নদীভাঙনের মুখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এ কারণে তাঁর গায়ে কাদামাটি ছুড়ে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় লোকজন। এই প্রতিবাদে নেতৃত্বে ছিলেন দলেরই কয়েকজন।
গত ২৩ আগস্ট কয়রা উপজেলার কালনা মাদ্রাসা মাঠে শোক দিবসের সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জি এম মহসীন রেজার তোপের মুখে পড়েন তিনি। সাংসদ বাবুর বক্তৃতা চলাকালে মহসীন রেজা বলেন, ‘এখানে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেবেন না। আপনি আর দলের বারোটা বাজাবেন না। আমরা এতদিন কোনো কথা বলিনি।’
কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মহসীন রেজা বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এমপি দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। তিনি বিরোধী দলের লোকজনকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পাচ্ছে।’ পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু বলেন, আক্তারুজ্জামান বাবু গত পাঁচ বছরে এলাকার নেতাকর্মীর জন্য কিছুই করেননি। যা কিছু করেছেন নিজের এবং তাঁর কিছু অনুসারীর জন্য।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহরাব আলী সানা বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে আমার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ হয়নি। নির্বাচনের সময় আসায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সেসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় নেতাকর্মী দীর্ঘদিনের অবহেলা ও উপেক্ষার জবাব যেভাবে দিচ্ছেন তা বিব্রতকর।’ পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আলী গাজী বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্যের কারণে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও আমাকে ফেল করতে হয়েছে। তিনি সে সময় সরাসরি নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’ কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম সানা বলেন, এলাকায় সংসদ সদস্য ‘ভাইলীগ’ তৈরি করেছেন। এলাকায় তাদের দাপটে ত্যাগী নেতারা লজ্জা ও হতাশায় ভুগছেন।
আমাদি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সবুর ঢালীর অভিযোগ, এলাকার পদধারী জামায়াত নেতারা এমপির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এতে দলের কর্মীর কাছে ছোট হচ্ছেন তিনি। বাগালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার সানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এমপির ইন্ধনে আমাকেসহ আমার কলেজপড়ুয়া মেয়ে ও ছেলেকে একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় পুরস্কার হিসেবে এমপি এ টুকুই দিয়েছেন।’
এই কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬ জন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহরাব আলী সানা, কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জি এম মাহবুবুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মনিরুল ইসলাম, শিল্প-বাণিজ্য সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম রাসেল, বিএমএ নেতা ডা. মো. শেখ শহীদ উল্লাহ।
জি এম মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ঠিকাদারি কাজগুলো এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের বিষয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে অসন্তোষ আছে। দলের নেতাকর্মীর বেশির ভাগই তাঁর বিপক্ষে। এলাকার মানুষ বহিরাগত কাউকে মেনে নিতে চাইছে না। তবে আক্তারুজ্জামান বাবু সমকালকে বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ গণসংযোগে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। কিন্তু দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আমার পক্ষে। আমার জন্ম পাইকগাছা উপজেলার গড়ুইখালীতে নানাবাড়িতে। সেখানে অনেক দিন থেকেছি। পাইকগাছা সদরে বাড়ি করেছি। তাহলে আমি বহিরাগত কীভাবে?’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।