বাসুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
চুনারুঘাট উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাসুল্লা গ্রামে ৯২ বছর ধরে শিক্ষার আলো বিলিয়ে আসছে বাসুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের অবস্থা এখন জরাজীর্ণ। মামলার কারণে ২৫ বছরেও এই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এতে বিপাকে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
১৯৩১ সালে বাসুল্লা মুন্সিবাড়িতে শুরু হয় বিদ্যালয়ের পাঠদান। সরকারীকরণের পর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ায় তৎকালীন প্রধান শিক্ষক গ্রামবাসীকে জানিয়েছিলেন, সরকারি উদ্যোগে বিদ্যালয়টি পাকা করা হবে। নির্মিত হবে বিদ্যালয় ভবন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের মধ্যে শিক্ষার চর্চা অব্যাহত রাখতে ১৯৭৭ সালে এগিয়ে আসেন বাসুল্লা এলাকার হাজি মোহাম্মদ হোসেন। তিনি স্কুলের জন্য ৩৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। বাসুল্লা বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জরাজীর্ণ একটি টিনশেড ঘরে জোড়াতালি দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। টিনের ঘরেই ৪৬ বছর ধরে চলছে পাঠদান। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের আবেদন করেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা রানী দাশ। তাঁর আবেদনের পর ভবন নির্মাণকাজের উদ্যোগ নেয় উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি)। ভূমির মালিক মরহুম হাজি মোহাম্মদ হোসেন সে সময় স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ভবন নির্মাণ শুরুর আগে স্কুলের আশপাশের সবার সমঝোতায় নির্মাণ কর্তৃপক্ষকে জায়গা বুঝিয়ে দেন। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী বেইজ ঢালাই দিয়ে ১৫টি উঁচু পিলারও নির্মাণ করা হয়।
জমি দানের ২১ বছর পর বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর এক মাস না যেতেই জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ। বিদ্যালয়ের পাশের দুই বাসিন্দা করিম হোসেন ও আমীর হোসেন হবিগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ১৯৯৮ সালের ২২ জুলাই একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত বিরোধপূর্ণ জমিতে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার আদেশ দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল স্বপ্না জানান, এরই মধ্যে তিনবার বিদ্যালয়ের পক্ষে রায় পাওয়া গেছে। কাজের উদ্যোগ নিলেই হয়রানি করা হচ্ছে। বাধা দিচ্ছে বাদীপক্ষের লোকজন। ফলে আর নতুন ভবনের কাজ হচ্ছে না। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া বেইজের ইটের গাঁথুনি ও পিলারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি যে স্থানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, এর পাশেই বিদ্যালয়ের তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনশেডে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে শীত-বর্ষা-গরম সব মৌসুমেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রধান শিক্ষক জানান, এমন অবস্থায় বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নতুন ভবনের নির্মাণাধীন স্থানে ঝোপঝাড় গজানো এবং পানি জমে থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে মরণফাঁদ। নোংরা আর পচা পানির গন্ধে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে টেকা দায়।
স্থানীয় বাসুল্লা গ্রামের বাসিন্দা ও ওই বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মহরম আলী জানান, ৪৬ বছর ধরে টিনশেড ঘরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। ঝড়-বৃষ্টিতে যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এ ঘর। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থী। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন শিক্ষকরা। একাডেমিক ভবনের সমস্যার কারণে অনেক অভিভাবক সন্তান ভর্তি করেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ছালেক মিয়া জানান, মামলা জটিলতার কারণে ৯২ বছরের পুরোনো বিদ্যালয়টিতে ২৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। এদিকে বাদীপক্ষের লোকজনের বাধা-বিপত্তি ও মামলার ধীরগতির কারণে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন থমকে আছে।
এদিকে মামলা জটিলতার অবসান হওয়ার পর বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী দীপক কুমার দাশ।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, মামলা জটিলতায় ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে সেখানে। তবে সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাদীপক্ষের সিরাজ মিয়া জানান, তাঁর চাচা মোহাম্মদ হোসেন বিদ্যালয়ের জমি দান করেছেন। সেখানে তাদের অংশ রয়েছে। এ জন্য জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।