বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট ৫৬ যাত্রী নিয়ে গত বুধবার বিকেলে বরিশাল বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড়ে যায়। অঘোষিতভাবে ঢাকা-বরিশাল রুটে এটিই ছিল ইউএস-বাংলার সর্বশেষ ফ্লাইট। লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে ইউএস-বাংলা তাদের সেবা বুধবার থেকে অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। একই অজুহাত দেখিয়ে এক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় আরেক বেসরকারি সংস্থা নভোএয়ারের সেবাও। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে বলে জানা গেছে।
বিমান সূত্র জানিয়েছে, আগে ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রতিদিন তাদের একটি করে ফ্লাইট ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটে সপ্তাহে তিন দিন এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। যে কোনো সময় এই সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।


প্রতিষ্ঠানগুলো এ রুটে যাত্রী সংকটের অজুহাত দেখালেও পরিসংখ্যান তা বলছে না। বরং মুনাফার জন্য অন্য রুটে বেশি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান সংস্থাগুলো বরিশাল রুট বন্ধ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, বরিশাল যে লোকসানি রুট নয়; তার প্রমাণ গত বুধবার ইউএস-বাংলার সর্বশেষ ফ্লাইট। ৭২ আসনের বিমানটি পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে বরিশালে পৌঁছায় এবং ৫৬ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় গেছে। তাদের এক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৮ ভাগ যাত্রী নিয়েই এই রুটে চলাচল করেছে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট।
বরিশাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দৈনিক ফ্লাইট চলত চারটি। তখন মাসে যাতায়াত করতেন ১০-১১ হাজার যাত্রী। সেতু চালুর পর প্রথম কয়েক মাস যাত্রী সংখ্যা নেমে আসে ৭-৮ হাজারে। পরে আবার তা বেড়েছে। বর্তমানে ইউএস-বাংলার দৈনিক একটি ও বিমানের সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট মিলিয়ে মাসে প্রায় ছয় হাজার যাত্রী বরিশাল থেকে বিভিন্ন রুটে যাওয়া-আসা করছে।
বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রথম দিকে বিমানে যাত্রী কমেছিল। এখন প্রায় প্রতিদিনই পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটগুলো যাচ্ছে। তার পরও লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ফ্লাইট বন্ধের পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।
অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-চেন্নাই রুটে ফ্লাইট চালুর জন্য ইউএস-বাংলা বরিশাল রুটটি বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে ভাড়া ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে সরকারি ট্যাক্স দিতে হয় ৯২৫ টাকা। আগে ছিল ৭২৫ টাকা। সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে ২০০ টাকা ট্যাক্স বৃদ্ধি করায় আমাদের লোকসানে পড়তে হয়েছে। এ কারণে আপাতত বরিশাল-ঢাকা রুটে ফ্লাইটসেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বরিশালে ইউএস-বাংলার অফিস চালু থাকবে।


প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের জিএম কামরুল ইসলাম বলেন, ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিচ্ছি আমরা। যাত্রী সংকটের কারণে এটা হচ্ছে। এ জন্য আপাতত ফ্লাইটসেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।