প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩ , ১:৫২ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩ , ১:৫২ অপরাহ্ণ
ঝালকাঠিতে অস্ত্র ও মাদক মামলায় রোজিনা বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধূকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচ এম ইমরানুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালতে রাজাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) সুরমা আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রোজিনার মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তাকেও মায়ের সঙ্গে রাখার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।’
এর আগে ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাশকাঠি গ্রামে গত বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে রোজিনা বেগম ও তাঁর তিন বছরের মেয়ে নুসরাত ফারিয়া মৌকে আটক করেন বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। এ সময় ঘর থেকে দেশে তৈরি পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলি ও ১৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।
রোজিনা কানুদাশকাঠি গ্রামের আলামিন হোসেনের স্ত্রী। আটকের পর বুধবার রাতে মা-মেয়েকে হেফাজতে রাখে ডিএনসি। পরে গতকাল সকাল ৯টার দিকে রাজাপুর থানায় হস্তান্তর এবং ডিএনসি বরিশাল বিভাগীয় শাখার এসআই ইশতিয়াক হোসেন অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক মামলা করেন। এতে রোজিনাকে প্রধান ও তাঁর স্বামী আলামিন হোসেনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। পরে রোজিনাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজাপুর থানা পুলিশ দুপুরে ঝালকাঠি আদালতে পাঠায়। পুরো সময় নুসরাত মায়ের সঙ্গে ছিল এবং কান্নাকাটি করছিল। বরিশাল থেকে ঝালকাঠির রাজাপুরে এসে ডিএনসির অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবারের দাবি, প্রতিপক্ষ ডিএনসির মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদক দিয়ে রোজিনাকে ফাঁসিয়েছে। রোজিনার বাবা বারেক মিয়া সমকালকে জানিয়েছেন, স্থানীয় তিনটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের জমাজমি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে প্রতিপক্ষরা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে ফাঁসিয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার বাদী এসআই ইশতিয়াক হোসেন বলেন, ‘আলামিন যশোরের বেনাপোল থেকে মাদক এনে বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করেন। তিনি এলাকায় বড়মাপের মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে রোজিনা এ কারবার চালান। ক্রেতা সেজে তাঁর কাছ থেকে আমরা মাদক নিয়েছি। কারও প্রভাবে নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরিশাল অঞ্চলে এখন ফেনসিডিলের সংকট। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক বোতল ফেনসিডিল ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন আলামিনরা। অভিযানের আভাস পেয়ে আলামিন পালিয়ে গেলেও তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।’
অবশ্য থানা হেফাজতে থাকার এক ফাঁকে রোজিনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, স্বামীর মাদক কারবারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ঘরে অস্ত্র, গুলি ও ফেনসিডিল ছিল, তাও জানা নেই। বিনা অপরাধে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
কানুদাশকাঠি গ্রামের খাদিজা বেগম জানান, আলামিন-রোজিনা দম্পতির মাদক কিংবা অস্ত্র কারবারের বিষয় তাদের জানা নেই। তবে থানা হাজতে মা-মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তা অন্যায়। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুটি সকাল থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা কান্নাকাটি করেছে। তাকে বাইরে এনে কোলে ঘুরাতে চাইলেও পুলিশ দেয়নি। পরিবারের কাউকে রোজিনার ধারেকাছে যেতে দেয়নি পুলিশ।
রোজিনার ভাই জুয়েল মিয়ার অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে ঘরে অস্ত্র, গুলি ও ফেনসিডিল রেখে তাঁর বোনকে ফাঁসানো হয়েছে। অভিযানের সময় ঘরে কিছু না পেয়ে ডিএনসির সদস্যরা কাকে যেন ফোন করে হতাশা ও গালমন্দ করেন। পরে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে দেওয়ার পর ড্রয়ারের নিচের তাক থেকে অস্ত্র-গুলি ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
রাজাপুর থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় জানান, রোজিনার নামে আগে কোনো মামলা নেই। তবে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ঝালকাঠি সদরে একটি ও রাজাপুর থানায় দুটি মাদক মামলা আছে। মা-মেয়ের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রোজিনাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্বজনের কাছ থেকে নগদের মাধ্যমে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। রোজিনার ভাই জুয়েল মিয়া জানান, ডিএনসি বরিশাল বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফারুক নামে একজন বুধবার রাত থেকে বহুবার বোনকে ছেড়ে দিতে ২০ হাজার টাকা চান। পরে ধারকর্জ করে গতকাল সকাল ৯টার দিকে তাঁর সরবরাহ করা নগদ নম্বরে ১৬ হাজার টাকা দিলেও বোন ছাড়া পাননি। অভিযানের সঙ্গে জড়িতরা ছাড়া এত সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও জানার কথা নয়। এ জন্য বিশ্বাস করে টাকা দেওয়া হয়। এখন মনে হচ্ছে, পুরো ঘটনা ডিএনসির কারসাজি। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান তিনি।
তবে ডিএনসির এসআই ইশতিয়াক হোসেন জানান, তারাও প্রতারণার বিষয় জেনেছেন। তদন্ত করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।