পূর্বাকাশে উদিত সূর্যের আলো শিশিরে পড়েছে সবে। এর মাঝেই ভিড় বাড়ছে ক্যাম্পাসে। মর্যাদার কালো গাউন গায়ে জড়িয়ে আসছেন সবাই। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্র্যাজুয়েটদের মিলনমেলায় পরিণত হলো ক্যাম্পাস। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ বন্ধুদের নিয়ে মেতে উঠছেন উৎসবে। এত হাসি-আনন্দের মাঝেও তাদের চোখে পানি। হয়তো আর আসা হবে না ক্যাম্পাসে। আজ যে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেবে লাল পাহাড়ি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বলছিলাম প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের কথা।
গেল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে জমকালো আয়োজনে শেষ হয় সমাবর্তনটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তনে ২ হাজার ৮৮৮ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী ১ হাজার ২২২ জন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ১ হাজার ৬৬৫ জনকে ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া শিক্ষায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। সমাবর্তনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করেছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার শুরু হয় সমাবর্তনের গিফট সামগ্রীর বিতরণ। কালো গ্রাউন পরে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলে সমাবর্তন প্রস্তুতি। এত বছর একসঙ্গে কাটানো বন্ধুদের কাছে পেয়ে আনন্দ যেন আর ধরছে না। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলছেন কেউ কেউ। আবার ছবি তুলে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করতেও ভুলছেন না অনেকে। আবার কেউ সন্তানকে সঙ্গে করে এসেছেন প্রিয় আঙ্গিনায়।


কথা হয় অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফাতেমা নুর জান্নাতের সঙ্গে। যিনি তার দুই বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কাটানো দুটি দিন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘আমার বাবা একদিন আমাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। আজ বাবা আমার পাশে নেই। আমার ছেলেটি ক্যাম্পাসে এসে বুঝতেই পারছে না তার মায়ের বিদ্যাপীঠে এসেছে। দেখতে দেখতে শেষ হয় সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রপতি ডিগ্রি প্রদান করেন গ্র্যাজুয়েটদের। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। আর হয়তো আসা হবে না লাল পাহাড়ে ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে। শহীদ মিনার, কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চে আর জমবে না আড্ডা। জীবনে কখনও দেখা হবে না হয়তোবা এত বছর একসঙ্গে কাটানো বন্ধুদের সঙ্গে। এসব কথা মনে পড়েই সবার চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়। এ অশ্রু আনন্দ নাকি বিষাদের জানা নেই কারও। জীবন যুদ্ধে যে এবার নামতেই হবে। া
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।