সেদিন শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর পুরস্কার মঞ্চে সাকিবের করা মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন রমিজ রাজা তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে। অল্প রানে অলআউট হওয়ার কারণ হিসেবে তামিম ইকবাল আর লিটন দাসের অনুপস্থিতির কথা বলেছিলেন সেদিন। অধিনায়ক তাঁর একাদশে আস্থা না রাখায় অবাক হয়েছিলেন রমিজ রাজা।
এবার পাকিস্তানের কাছেও চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ অধিনায়কের অজুহাত সেই টপঅর্ডার ব্যাটিং। ‘এ ধরনের উইকেটে প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারানো আমাদের উচিত হয়নি। বাজে কিছু শটস খেলে আমরা উইকেট দিয়েছি।’
কিন্তু এই একাদশ, এই স্কোয়াড তো অধিনায়কের পছন্দেই হয়ে থাকে। যে টিম ম্যানেজমেন্টের কথা বলা হয়ে থাকে, সেখানে কোচ, নির্বাচক ছাড়াও বড় ভূমিকা থাকে অধিনায়কের। সেই টিম ম্যানেজমেন্টই তো ওপেনার হিসেবে নাঈম শেখকে বেছে নিয়েছে এশিয়া কাপের জন্য। ঢাকঢোল পিটিয়ে তানজিদ তামিমকে স্কোয়াডে নেওয়ার পর এক ম্যাচ খেলিয়ে বসিয়ে রাখাটাও তো এই টিম ম্যানেজমেন্টেরই কারণে।
মিরাজকে ওপেনার বানিয়ে ম্যাচ জেতার কৃতিত্ব যদি অধিনায়ক পেতে পারেন, তাহলে তাঁর ব্যর্থতার দায়ও নিতে হবে সাকিবকেই। শুধু হারলেই ‘ব্যাটাররা পারেনি’ কিংবা ‘প্রতিপক্ষ বোলাররা ভালো বোলিং করেছে’ যুক্তি খাড়া করে পার পাওয়া যায় না। যে কারণে সেদিন বিরক্ত হয়েছিলেন রমিজ রাজা, আর সে কারণেই বিরক্ত বাংলাদেশ দলের সমর্থকের একটা বড় অংশ।
যদিও দলের সহকারী কোচ নিক পোথাস লাহোরের সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন, দল একটি পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই এই সমস্যাটা হচ্ছে।‘ একটা দল যখন ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যায়, তখন এই ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়। তা ছাড়া পাকিস্তানের এলিট বোলিংয়ের কথাও মাথায় রাখতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলি না। শেষবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা হয়েছিল ২০১৫ সালে। তারপর গত বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিল। এটা বরং ভালো হলো, বিশ্বকাপের আগে একবার তাদের সঙ্গে ম্যাচের অভিজ্ঞতা হলো।’
দলের মুখপাত্র হয়ে পোথাসও ‘অভিজ্ঞতার অভাব’ ধরনের একটা যুক্তি সাজিয়েছেন। স্কোয়াড নির্বাচনে অনভিজ্ঞতার চেয়েও বড় প্রশ্ন থেকে যায় তানজিদ এবং শামীমের মতো ক্রিকেটারদের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে অভিষেক না করিয়ে এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে নামিয়ে দেওয়া। যদি এতই আস্থা থাকত তানজিদের ওপর, তাহলে কেন একটি ম্যাচ দেখেই তাঁকে দলের জন্য পানি টানতে বলা হচ্ছে। ইমার্জিং এশিয়া কাপে রান না পেয়েও নাঈম শেখকে দলে নেওয়া। অথচ টানা পাঁচ ওয়ানডেতেও তিনি ত্রিশোর্ধ রানের ইনিংস খেলতে পারেননি। কোনো ইনিংসে নব্বইয়ের ওপর স্ট্রাইক রেটও করতে পারেননি।
মিডল অর্ডারে মুশফিকের চেয়েও যাকে বেশি ভরসা করা হচ্ছে, সেই তাওহিদ হৃদয়ই বা কী করছেন। আয়ারল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম ছয়টি ওয়ানডে খেলিয়েই তাঁকে বিশ্বকাপের মতো আসরের জন্য সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ সেই তাওহিদ গত পাঁচ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২২ করেছেন! শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দলগুলোর বিপক্ষে দুর্বলতাগুলো ফুটে উঠেছে তাঁর। দলের সাত নম্বর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মিরপুরে রুদ্ধদ্বার গবেষণা চালানোর পর শামীম হোসেনকে দুটি ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দুটি ম্যাচেই তিনি প্রমাণ করেছেন টি২০ আর ওয়ানডে ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে।
আফিফ হোসেনকে আট নম্বরে নামিয়েও তাঁর আত্মবিশ্বাস ফেরানো যায়নি। শেষ ১১টি ওয়ানডেতে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ২৩! এর মধ্যে সাত ও আট নম্বরে ব্যাটিং করেছেন তিনি। টেলএন্ডারদের কথা বাদই দিতে হচ্ছে এখানে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান– দুটি ম্যাচেই শেষ চার উইকেট গেছে ৩ রানের মধ্যে! তাসকিন, শরিফুল, হাসানদের ব্যাটিংয়ের হাত কতটা ভালো, সেটা জেনেই টিম ম্যানেজমেন্ট একাদশে আট ব্যাটার রাখছে।
সব ব্যাটারের পারফরম্যান্সই যদি এমন পড়তির দিকে থাকে, তাহলে কার বদলে কাকে নেওয়া হবে? উত্তরটা নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টকেই দিতে হবে। কোন ব্যাটার মিরপুরে ভালো খেলে, কোন ব্যাটার মেলবোর্নে কিংবা কোন ব্যাটার কোন পজিশনে, পেস বা স্পিন কোন বোলিংয়ে ভালো করে তা টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্যই ভালো জানেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।